For Recent News Click

উপভোগের আনন্দই মূল কথা

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট অ্যাডাম গিলক্রিস্ট

তিনটি বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হিসেবে আমি বলতে পারি, প্রতিটি টুর্নামেন্টেরই নিজস্ব চিত্রনাট্য ও গল্প আছে। টানা তিনটি শিরোপা জয়ের প্রতিটিই আমার স্মরণীয় অর্জন। তবে প্রতিটি জয়েরই পথ ছিল ভিন্ন, প্রতিটি টুর্নামেন্ট আমাদের পরীক্ষা নিয়েছে ভিন্নভাবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে গড়পড়তা মানের চেয়েও বাজে পারফর্ম করে আমরা ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলাম। টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজও হয়েছিল ড্র। বছরটা আমাদের ভালো যাচ্ছিল না, ভালো হয়নি বিশ্বকাপের শুরুটাও। আমাদের ঘিরে ছিল মাঠের বাইরের বিতর্কও। ওয়েস্ট ইন্ডিজে শেষ টেস্টে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বাদ পড়েছিল শেন ওয়ার্ন। এ নিয়ে গণমাধ্যমের তুমুল বিতর্কের মধ্যেই আমরা ইংল্যান্ডে পা রাখলাম। এই সব কিছু সম্ভবত দলকে দিগ্ভ্রান্ত করে ফেলেছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবিষ্কার করলাম, আমরা বাদ পড়ে যাওয়ার দোরগোড়ায়।
কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইলাম। সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা শেন হঠাত্ করেই প্রমাণ করতে শুরু করল ও কত বড় চ্যাম্পিয়ন। ওর পারফরম্যান্স এতটাই প্রেরণাদায়ী ছিল যে পুরো দলের চেহারাই বদলে গেল।
সেবার শিরোপা জয়ের আরেক রূপকার ছিল স্টিভ ওয়াহ। সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে ওর সেঞ্চুরিটাই আমাদের টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই এক হয়ে নাটকীয় ও স্মরণীয় জয় আনলাম।
২০০৩ বিশ্বকাপ খেলতে যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলাম, আমাদের দল তখন অনেকটাই স্থিতিশীল। কিন্তু খেলা শুরুর আগেই আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের মধ্যে পড়লাম। ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ হলো শেন ওয়ার্ন। ম্যাচ শুরুর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে তাঁর মতো বোলারকে হারানোর ধাক্কা সামলে আমরা ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছিলাম রিকি পন্টিং ও জন বুকাননের অসাধারণ নেতৃত্বে।
আমার ধারণা, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেই আমরা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পেরেছিলাম। টুর্নামেন্টটা ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা। পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল আমাদের। তবে প্রতিটি চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়ে আমরা শিরোপা জিতেছিলাম অপরাজিতভাবে। আমি বলব, আমাদের প্রজন্মের মূল অংশটা নিজেদের সামর্থ্যের চূড়ায় ছিল এই বিশ্বকাপেই।
২০০৩ বিশ্বকাপে কঠিন ক্রিকেট খেলেছি, ২০০৭-এ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজত্ব করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচের খানিকটা সময় বাদ দিয়ে কোনো ম্যাচে আমরা সংকটের কাছাকাছিও ছিলাম না।
এই জয়ের প্রতিটিই ছিল বিশেষ কিছু। কারণ, স্রেফ একটি ম্যাচ জয় নয়, এসব ছিল বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের কাছাকাছি আসা আর এক বাঁধনে জড়ানোর উপলক্ষ। এদের অনেকেই হয়তো আগে কাছের বন্ধু ছিল না। আমার ও শেন ওয়ার্নের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এটা সত্য, আমাদের জীবনদর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কিন্তু আমার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হলো শেনের বলে কিপিং করা। ওর সাফল্য আমি দারুণ উপভোগ করেছি, যেমন ও করেছে আমারটা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ও সব সময়ই আমাদের মতের ভিন্নতা বুঝতে পেরেছে এবং মিল খোঁজার চেষ্টা করেছে। একই কথা প্রযোজ্য দলের অন্য সব ক্রিকেটারের জন্যও। দলের আর সবার সঙ্গে খেলে যেমন আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, তেমনি আমি ও শেন এখনো ভালো বন্ধু।
সহ-অধিনায়ক হিসেবে অধিনায়ক ও বাকি দলের মাঝে সেতুবন্ধের কাজটা আমি খুব উপভোগ করতাম। আমার ধারণা স্টিভ, রিকি, শেন ও ম্যাকগ্রার মতো বলিষ্ঠ ও স্বতন্ত্র মানুষগুলো কাছাকাছি আসতে পেরেছিল দলটার সততার কারণে। আমরা জানতাম, সবার মাঝে সমান বন্ধুতা থাকা সম্ভব নয়। তবে একই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বটা আবার সবাই বুঝতাম।
আমি নিশ্চিত, এই নতুন ছেলেদের মাঝেও রিকি এই চেতনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। বিশ্বকাপ একটা বিশেষ টুর্নামেন্ট, ঐতিহ্যবাহী কোনো সিরিজ বা ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে আলাদা। এর একটা আলাদা শক্তি ও আলাদা সংস্কৃতি আছে। অবিশ্বাস্য জয়ের ধারাটা ধরে রাখতে হলে অস্ট্রেলিয়াকে এই শক্তিটাকে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং উপভোগ করতে হবে। প্রস্তুতির সময়টা তাদের সাহায্য করবে একটা দল হিসেবে গড়ে উঠতে। টুর্নামেন্টটাকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে নেওয়া এবং একবার বেশি দূর না ভাবাটা জরুরি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ শুরু করেছিলাম আমরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার মানসিকতা নিয়ে। বিশ্বকাপে সফল হওয়ার যদি কোনো চাবিকাঠি থাকে, তা হলো এটি উপভোগ করা এবং বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা ধরে রাখা।

0 comments:

Post a Comment