For Recent News Click

ওদের থাক চাপ আমাদের উপভোগ

হাবিবুল বাশার হাবিবুল বাশার
এই ম্যাচ নিয়ে আমার প্রত্যাশা কী? মনেপ্রাণে চাইছি জয় দিয়ে শুরু করুক বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের শুরুটা জয় দিয়ে করতে পারলে সেটার রেশ বাকি অংশেও থেকে যায়। বাকি কাজটাও অনেক সহজ হয়।
ভারতের বিপক্ষে জয়—এটি আমার চাওয়া। আমরা হেরে যেতেও পারি—এটি কিন্তু বাস্তবতা। শুধু ক্রিকেটের নিক্তিতে দুই দলকে মেপে দেখুন, ভারত ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল, আমরা মাত্র উঠেছি আটে। খেলোয়াড় ধরে ধরে মাপলেও ভারত আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে।
কিন্তু খেলাটা ক্রিকেট। আমি উদাহরণটি প্রায়ই দিই। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে আমাদের হারানোর উদাহরণ। এমন কথা তো কোথাও লেখা নেই, র্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বর দল দুই নম্বরকে হারাতে পারবে না!
দুটো অনুশীলন ম্যাচ দেখলাম ভারতের। প্রথমত বলব, ২০০৭ বিশ্বকাপের চেয়ে এই দলের সবচেয়ে বড় পার্থক্য মানসিকতায়। ধোনির মতো একজন অধিনায়ক পেয়েছে, তুমুল উত্তেজনার মধ্যেও যে অবিচল! ব্যক্তিগত স্কিলের কথা ধরলেও ভারত এগিয়ে। ব্যাটিং আর ফাস্ট বোলিংয়ে। ওদের দলে হরভজন আর পীযূষ চাওলা আছে, কিন্তু আমাদের স্পিন আক্রমণ ওদের চেয়ে এগিয়ে।
ম্যাচটি নিয়ে একটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি চলছে। আমি বলব, এটা বড় ম্যাচ, আবার বড়ও না। গতবারের ফরম্যাটই ওই ম্যাচটাকে আমাদের জন্য বেশি কঠিন বানিয়ে দিয়েছিল। ভারতের কাছে হারলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের জিততেই হতো—এমন পরিস্থিতি ছিল। এবার এই ম্যাচ হারলেও আমাদের সামনে আরও পাঁচটি ম্যাচ থাকবে। তাই সাকিবদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। বরং ভারতকে প্রথম ম্যাচে পেয়ে ভালোই হয়েছে। গ্রুপে এটাই আমাদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। প্রথম ম্যাচ দিয়ে ‘আপদ বিদেয় হোক’।
‘জিতব’ মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। কিন্তু ‘জিতবই’ চিন্তাটাকে মাথায় স্থান দেওয়া যাবে না। বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে নির্ভার থাকার ওপর। বাংলাদেশ দলকে বলি, তোমরা নির্ভার থাকো। সমর্থকদেরও বলি, প্রত্যাশার চাপে সাকিবদের ভারাক্রান্ত করবেন না, প্লিজ।
গত বিশ্বকাপেও আমাদের প্রথম ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে। ওই ম্যাচের আগে থেকেই দলে একটা ইতিবাচক আবহ ছিল। আমরা বিশ্বকাপের আগে দুর্বল হলেও টানা কয়েকটি ম্যাচ জিতেছিলাম। আমাদের জয়ের অভ্যাস গড়ে উঠছিল।
সবচেয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনটা হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ জেতার পর। ওই টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত দল ছিল। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওরা বেশ কটি ম্যাচ তিন শর বেশি রান তাড়া করেও জিতেছে। সেই নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠে যায়। সবাই আমাদের দিকে অন্য চোখে তাকাতে শুরু করেছিল।
ম্যাচের আগে আমি সতীর্থদের একটা কথাই বলেছি—নির্ভার থাকো। উপভোগ করো। খেলার ফল নিয়ে পরে ভাবো। সেরাটা দাও। মনে আছে, ম্যাচের আগে আমরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যখন এসব কথা বলছিলাম, মাশরাফি এগিয়ে এসে তাঁর সেই বিখ্যাত মন্তব্যটি করেছিল, ‘ধরে দিবানি।’
অনেকেই জানতে চায়, ওই ম্যাচে আমরা বিশেষ কোনো রণকৌশল নিয়েছিলাম? ভারতীয় কিছু সাংবাদিক এখনো আমাকে সেই প্রশ্ন করছেন। সত্যি বলি, আমাদের মূল রণকৌশল ছিল বিশেষ কোনো রণকৌশল নিয়ে না-নামা। তবে আমরা প্রথমেই শেবাগকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেটি পেরেছি। আজও পারতে হবে। শেবাগ থাকা মানেই আপনার পরিকল্পনা ভণ্ডুল।
গত বিশ্বকাপের সঙ্গে এই ভারতীয় দলটায় খুব বেশি পরিবর্তন নেই। আমাদের দলে অনেক পরিবর্তন। কিন্তু ওই ম্যাচে জয়ের নায়কেরা আছে। তামিম, মুশফিকুর, সাকিব, রাজ্জাক...শুধু মাশরাফি নেই। মাশরাফি আজ থাকলে খুব ভালো হতো। ভারতের বিপক্ষে আমাদের দুটো জয়েরই ম্যান অব দ্য ম্যাচ সে। এ নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। মাশরাফির ভূমিকাটা নিতে হবে শফিউল-রুবেলকে।
ভারত চাপে আছে। ভারতীয় মিডিয়ার অবশ্য দাবি, বাংলাদেশও চাপে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের চাপ থাকলে ওদের ১০০ কোটি মানুষের চাপ। চাপটা ওরা নিক, আমরা বরং উপভোগই করি।

0 comments:

Post a Comment