For Recent News Click

‘ক্রিকেটের বাইবেলে’ তামিম ইকবাল http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-08/news/145206



তামিম ইকবাল: ‘এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন।’


প্রথমে লর্ডস, এরপর ওল্ড ট্রাফোর্ড। গত বছর ইংল্যান্ড সফরে সিরিজের দুই টেস্টেই স্ট্রোক-ঝলমলে সেঞ্চুরি। প্রথমটি ৯৪ বলে, দ্বিতীয়টি ১০০ বলে।
লর্ডসে সেঞ্চুরিতেই লেখা হয়েছিল নতুন ইতিহাস—ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিও তামিমের। ইংল্যান্ডে ওই দুই সেঞ্চুরিই তামিম ইকবালকে এনে দিয়েছে আরেকটি ‘প্রথম’-এর গৌরব। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক-এর বর্ষসেরা ক্রিকেটারের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্থান পেয়েছেন এই বাঁঁহাতি ওপেনার।
‘ক্রিকেটের বাইবেল’ হিসেবে পরিচিত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক-এর ১৪৮তম সংস্করণ বাজারে আসবে ১৪ এপ্রিল। ঐতিহ্য অনুযায়ী, এর আগের রাতে লর্ডসের লং রুমে নৈশভোজে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হবে বিখ্যাত সেই হলুদ বই। এত দিন ‘উইজডেন ফাইভ ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’-এর নামও ঘোষিত হয়ে আসছে সেই রাতে। এবার ব্যতিক্রমীভাবে তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ লন্ডনে ঘোষিত হবে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের নাম, যাতে আছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবালও।
আরেকটি ব্যতিক্রমও হচ্ছে এবার। ১৯২৬ সালের পর এই প্রথম বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার নির্বাচনের রীতির ব্যত্যয় ঘটছে। উইজডেন সম্পাদক শিল্ড বেরি পাঁচজনকেই নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু তাঁদের একজন স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁকে বাদ দিতে হয়েছে। উইজডেন-এ ওই ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বেরি বলেছেন, ‘যদি তিনি অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতেন, তা হলে তাঁকে পুনর্বিবেচনা করা যেত। এ কারণেই আমি তাঁর বদলে আর কাউকে বেছে নিইনি। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁকেও রাখা যায় না। পুরো ব্যাপারটাই খুব দুঃখজনক।’
উইজডেন নাম না বললেও অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। একটু ইঙ্গিত দিলে পাঠকেরও তা বুঝতে সমস্যা হবে না। স্পট ফিক্সিং প্রসঙ্গই বুঝিয়ে দিচ্ছে, ওই ক্রিকেটার পাকিস্তানি। সঙ্গে যোগ করে নিন পরিচয়টাও—তিনি বাঁহাতি ফাস্ট বোলার।
‘ফাইভ ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’-এর বদলে এবার তাই ‘ফোর ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’। তামিম ইকবাল ছাড়া বাকি তিনজন—এউইন মরগান, জোনাথন ট্রট ও ক্রিস রিড। মরগানের নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান। ট্রট ২০১০ সালে টেস্টে ১৩২৫ রান করেছেন। সাবেক ইংল্যান্ড উইকেটকিপার রিড ২০১০ সালে নটিংহ্যামশায়ারের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তামিমকে নির্বাচনের কারণ হিসেবে শিল্ড বেরি বলেছেন, ইংলিশ মৌসুমের শুরুতে আর কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যান কন্ডিশনের ওপর এমন কর্তৃত্ব দেখাতে পারেননি। তামিমের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সেরা ফর্মের ম্যাথু হেইডেন বা ক্রিস গেইলের তুলনা করে তাঁকে নির্বাচন করতে পারাটাকে আনন্দের ব্যাপার বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। উইজডেন-এর নৈশভোজে তামিম ইকবালকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। তামিমও যেতে খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের সঙ্গে তারিখটা মিলে যাওয়ায় আর যাওয়া হচ্ছে না তাঁর।
তামিম ইকবালও সুখবরটা পেয়ে আপ্লুত, ‘গত কিছুদিন সময়টা খুব ভালো যায়নি। বিশ্বকাপে নিজের প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। খবরটা পেয়ে তাই খুব ভালো লাগছে। আমি খুব, খুব খুশি। এখন পর্যন্ত এটিই আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন।’
ক্রিকেটীয় যেকোনো অর্জনেই তামিমের মনে পড়ে প্রয়াত বাবাকে। এখানেও ব্যতিক্রম নয়, ‘উনি থাকলে এই পুরস্কারের মর্মটা আরও ভালো করে আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। আব্বু ক্রিকেট ইতিহাসের খুব অনুরাগী ছিলেন। উইজডেন, এমসিসি, লর্ডস—এসব শব্দ উনার মুখেই প্রথম শুনেছি।’
দু-একবার ব্যতিক্রম হলেও উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচনে মূলত আগের ইংলিশ মৌসুমে পারফরম্যান্সই বিবেচনায় নেওয়া হয়। নির্বাচনটা উইজডেন সম্পাদকের একক এখতিয়ার। ১৮৬৪ সাল থেকে প্রতিবছর প্রকাশিত হয়ে আসা উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচন করে আসছে ১৮৮৯ সাল থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রিকেট বন্ধ ছিল বলে ছয় বছরই (১৯৪১-৪৬) শুধু এর ব্যতিক্রম হয়েছিল। শুরুর দিকে সংখ্যাটা কম-বেশি হলেও ১৯২৭ সাল থেকে পাঁচজনই পেয়ে আসছেন এই স্বীকৃতি। এবারই সেই ঐতিহ্য থেকে সরে এল ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো ব্যক্তিগত পুরস্কার।
তামিম ইকবাল ২০১০ সালে উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকীর চোখে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগের বছর সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ এটিকেই ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেন-এর স্বীকৃতি বলে ভুল করেছিল। সেই ভুল ভাঙাতেই যেন ‘আসল’ পুরস্কারটা জিতলেন তামিম ইকবাল!
News Sours http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-08/news/145206

0 comments:

Post a Comment